আলু চাষ: মোঃ আব্দুর রউফ
আলু চাষ: কৃষিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ফসল হচ্ছে আলু। এই আলুকে তরকারির রাজা বলাও হয়ে থাকে। আজ আলু সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানবো।
চিত্র: আলু চাষের পদ্ধতি।
আলুঃ আলু বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদী সম্ভাবনাময় একটি ফসলের মধ্যে একটি। আলু প্রধানত দুই ধরনের হয়, ১। গোল আলু, ২। মিষ্টি আলু । এছাড়াও প্রজাতি হিসেবে অনেক রকম প্রজাতি চাষ হয় আমাদের বাংলাদেশে। তবে আজকে আমাদের গাইবান্ধা এবং জয়পুরহাট সংলগ্ন এলাকাগুলোতে যে ধরনের আলু চাষ করা হয় সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
চিত্র: গোল আলু ও মিষ্টি আলু।
মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলু বাংলাদেশের চরাঞ্চলে বেশি পরিমাণ চাষ করা হয়। বিশেষ করে যমুনা নদীর কূলে যে পলি মাটি দিয়ে স্থল তৈরি হয় সেখানে মিষ্টি আলু বেশি পরিমাণ চাষ করা হয়। মিষ্টি আলু ৩ মাসের মধ্যেই মোটামুটি ভালো ফলন হয়। আগের তুলনায় বর্তমান মিষ্টি আলুর চাহিদা অনেকটা বেশি এবং দামও বেশি হওয়ায় কৃষক মিষ্টি আলু চাষে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। মিষ্টি আলু বর্তমান সৌখিন মানুষরা শখ করে কিনে খায়। এবং অনেক ডাক্তারও মিষ্টি আলু খেতে উদ্বুদ্ধ করে। মিষ্টি আলু উন্নত চাষ পদ্ধতিতে চাষ করায় মোটামুটি ফলন বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি শতকে ৬০-৯০ কেজি মিষ্টি আলু উৎপাদন হয়। এবং বর্তমান বাজার মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে গড়ে প্রতি কেজি ২৫-৫০ টাকা বিক্রি করা হয়। এবং গোল আলুর তুলনায় মিষ্টি আলুর উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষক আলহামদুলিল্লাহ্ মোটামুটি লাভবান হচ্ছে। অনেক রকম মিষ্টি আলু চাষ করা হলেও লাল এবং মাঝারি মিষ্টি আলুর চাষ বেশি হয় এবং বাজারে চাহিদাও বেশি। অন্যান্য আলুর স্বাদও এই লাল আলুর স্বাদ তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে গাইবান্ধা জেলার প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই এই আলুর কম-বেশি চাষ দেখা যায়। তবে সব থেকে বেশি চাষ হয় ফুলছড়ি উপজেলাতে। মিষ্টি আলু আর গোল আলুর চাষের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। কিন্তু এলাকা ভেদে চাষের ভিন্নতা দেখা যায়।
গোল আলু: গোল আলু বর্তমান কৃষকের অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম ফসল। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র এই আলু চাষ লক্ষ করা যায়। তবে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত কিছু জেলায় আলু চাষ অনেক বেশি পরিমাণ হয়। মাটি ভেদে আলু চাষ ভিন্ন এলাকায় হয়ে থাকে পলিমাটিতে আলুর ফলন ভালো হয় না বলে, খিয়ারাঞ্চলে গোল আলু বেশি করা হয়। আজকে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলার আলু চাষ সম্পর্কে জানবো।
কথা শুরু করার আগে একটা জানিয়ে রাখি “বই পড়ে যেমন সাঁতার শেখা যায় না।” তেমনি বই পড়ে কখোনো আলু চাষ জানা সম্ভব না। তবে হ্যাঁ এতটুকু বলতে পারি যে, আলু চাষের ধারণা পাওয়া যায় বই পড়ে। তাই আলু চাষের সঠিক পদ্ধতি জানতে যে এলাকাতে আলু চাষ করা হয় সেই এলাকা গুলোতে আসতে হবে দেখতে হবে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলে বর্তমানে আলু চাষের পরিমাণ অনেক বেশি। এই এলাকা গুলোতে অনেক আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে আলু চাষ করা হয়। এছাড়াও মাটির উর্বরতাও আলুর জন্য অনেক ভালো এই এলাকা গুলোতে। দেশি আলু থেকে শুরু করে হাইব্রিডের সকল জাতের চাষ করা হয়। আঞ্চলিক নাম: লাল পাকড়ি, ফাটাপাকড়ি, বটপাকড়ি, স্টিক, কাটিলাল, সানসাইন, ডায়মন্ড, সাদা পাকড়ি ইত্যাদি সহ আরও অনেক জাত এখানে আবাদ করা হয়। আমাদের এলাকাতে পাকড়ি এবং স্টিকের চাহিদা বেশি হওয়ায় এই চাষ বেশি করা হয়। বর্তমানে দামও বেশি এই জাতের আলুর। বাংলাদেশে এ বছর আলুর সংকটের কারণে আলুর বাজার মুল্য একলাফে তিনগুন হয়ে গেছে। মিষ্টি আলুর থেকে গোল আলুর উৎপাদন বেশি। প্রতি শতকে প্রায় ৮০-১২০ কেজি আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। উৎপাদন খরচ মিষ্টি আলুর থেকে বেশি হওয়ায় বাজার মূল্যও এবছরে অনেক বেশি। প্রতিটি গাছে গড়ে প্রায় ৫০০গ্রাম আলু হয়। গতবছরের তুলনায় এবার এই এলাকাগুলোতে আলু চাষের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়েছে।
গোল আলু চাষের সঠিক সময় হলো অক্টোবর মাস।
No comments