Header Ads

Header ADS

ব্যবসা করতে কি কি দরকার?

সসালামু আলাইকুম। আমাদের আজকে জানার বিষয় হলো ব্যবসা কি? আমরা কেন ব্যবসা করবো? আমরা কিভাবে ব্যবসা করবো? ব্যবসার কয়টি পদ্ধতি রয়েছে?

তবে আর দেরি কেন? চলুন ধীরে ধীরে জেনে নেই, আমাদের আজকের টপিক ব্যবসা নিয়ে।


ব্যবসা হচ্ছে এমন একটি বৈধ এবং সামাজিক পরিষেবা যার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে একজন মানুষ সাবলম্বী হতে পারে। এবং মালিক ব্যবসা থেকে মুনাফা অর্জন করে দেশের ও দশের সেবা করে থাকে। সেই সাথে আরও বলা যেতে পারে পন্য উৎপাদন ও ক্রয় বিক্রয়ের একমাত্র পদ্ধতির নামই ব্যবসা। এক্ষেত্রে অনেক সরকারী চাকরিও ব্যবসার মতোই। আমরা কাজেই ব্যবসার সংজ্ঞা হিসেবে বলতে পারি “কোনো একটি একক অথবা যৌথ কর্মকান্ডে যুক্ত হয়ে পন্য উৎপাদন করে বিক্রি বা ক্রয় করে বিক্রি করে মুনাফার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের বৈধ মাধ্যম বা সেবাকে ব্যবসা বলা হয়।

সাধারণত বাংলাদেশে নানা মুখী ব্যবসা রয়েছে। যার সবগুলো কে তিনটি ক্যাটেগরি বা ধরনে ভাগ করা যায়। প্রথম দোকান বা প্রতিষ্ঠান, দ্বিতীয় অনলাইন এবং সবশেষ রয়েছে অন্যের পন্য সেল করতে সাহায্য যার নাম অফলাইন এফিলিয়েট মার্কেটিং। তবে আমরা অফলাইন ব্যবসা হিসেবেই জানি। তবে আমরা এখন জেনে নেই প্রতিটি ব্যবসা কি, কেন, কিভাবে পরিচালনা করা উচিত।

আলহামদুলিল্লাহ্। প্রথমেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি। আমরা আজ সমসাময়িক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চলেছি। প্রথমে আমরা জানবো দোকান বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে:

দোকান বা প্রতিষ্ঠান: নিজস্ব উদ্দোগ্যে ব্যক্তিগত ভাবে অর্থ বিনিয়োগ করে মুনাফা আয়ের একটি অন্যতম বৈধ মাধ্যম হলো দোকান। বর্তমানে এই সময়ে চাকরির পিছে না ছুটে অনেক অল্প সময়ে সফলতার দেখা পেয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। গ্রাম থেকে শুরু করে শহরে সব স্থানেই এরকম ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে ব্যক্তি মালিকানা ও অনেক যুবকের পরিবার গড়ে ওঠে। বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো ‍দুদ্ধজাত পন্য তৈরির কারখানা, মুদি দোকান, ডাক্তারি চেম্বার, ক্লিনিক, হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট সহ ব্যক্তিগত সকল প্রতিষ্ঠান এই ক্যাটাগরির অন্তর্গত।
  • দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সুবিধাঃ একটি দোকান বা প্রতিষ্ঠান যদি নিজস্ব ব্যক্তিগত হয় তবে অনেক রকম সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন:
  1. নিজের স্বাধীন মতো কাজ করা যায়।
  2. কাজে তৃপ্তি পাওয়া যায়।
  3. ইচ্ছামতো ঘোরাঘুরি করা যায়।
  4. কাজের হিসাব অন্য কাউকে দিতে হয় না।
  5. কেউ এসে কাজের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে না।
  6. ইসলামেও ব্যবসার কথা বলা আছে।
  • ব্যবসায়ের শর্তঃ ব্যবসার অনেক শর্ত আছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্ত হলো।
  1. সততার সহিত ব্যবসা করতে হবে।
  2. লোক ঠকানো যাবে না।
  3. ওজনে কম দেয়া যাবে না।
  4. কিংবা পণ্যের দাম অধিক বেশি নেয়া যাবে না।
  5. সঠিক সময়ে ব্যবসায়ের থেকে লভ্যাংশের নিসাব পরিমাণ যাকাত দিতে হবে।
  6. কারো সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না।
  7. যদি স্কুল কিংবা ওরমক কোনো প্রতিষ্ঠান হয় তবে অকারণে কোনো ফি নেয়া যাবে না।
সেই সাথে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান গুলোকেও নিয়ম কানুন মানতে হবে। সাধারণত ক্যাডেট স্কুল গুলো ব্যক্তিগত হলেও মানসম্মত এবং বিভিন্ন স্থানে প্রসংশিত। সকল ব্যবসায়ী ভাইদের কাছে একটা অনুরোধ থাকবে যেন তারা সর্বদাই সততার সহিত ব্যবসা করে। আল্লাহ তৌফিক দান করুন।

অনলাইন ব্যবসাঃ বর্তমান যুগের আরেকটি ব্যবসার ডিজিটাল মাধ্যম হলো অনলাইনে ব্যবসা করা। বিভিন্ন পণ্য ক্রয় বিক্রয় সহ নিজস্ব পণ্য বিক্রির অন্যতম একটি মাধ্যম হলো অনলাইন মাধ্যম। তবে অনেকে মনে করেন অনলাইন মানে হলো প্রতারণার স্থান। আমি অস্বিকার করবো না। আসলে অনলাইনেও সুন্দর এবং বিস্বস্ততার সহিত ক্রয় বিক্রয় করা যায়। বর্তমান এই মাধ্যমটা অনেক লাভ জনক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পন্য ক্রয় বিক্রয় করা হয়। এছারাও অনলাইনে রয়েছে ব্যবসায়ের অনেক বড় সুযোগ আপনি যদি একজন ডিজাইনার হয়ে থাকেন তবে আপনার রয়েছে অনেক বড় চাহিদা। এছাড়াও আপনি যদি একজন দোকানদারও হয়ে থাকেন তবে আপনি নিজে আপনার পণ্যের অনলাইন মার্কেটিংও করতে পারবেন। এর আরও কিছু সুযোগ সুবিধা উল্লেখ করা হলো। 

অনলাইন ব্যবসার সুযোগ সুবিধাঃ
  1. অনলাইন ব্যবসায়ে একস্থানে বসে থেকে সারাদেশেই নিজের পণ্য বিক্রি করা যায়। 
  2. মানুষের সাথে বিস্বস্ত হতে পারলে অন্যের পণ্যের মার্কেটিং ও করে দেয়া যায়।
  3. ভিডিও অথবা ফটোগ্রাফির মাধ্যমে ব্যবসা বাড়ানো যায়।
  4. শুধু মাত্র স্মার্ট ফোন হাতে নিয়েই ব্যবসায়ে নামা যায়।
  5. ফেসবুকে কিংবা অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই সহজেই ব্যবসা শুরু করা যায়।
  6. একই সাথে পরিবারে অন্য সদস্যদেরও ব্যবসায়ে সাহায্য নেয়া যায়।
অনলাইন ব্যবসা করতেও কিছু শর্ত মানতে হয়।
  1. প্রতারণা বা লোক ঠকানো ব্যবসা করা যাবে না।
  2. সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে পণ্য ডেলিভারির ব্যবস্থা করতে হবে।
  3. বিস্বস্ত মাধ্যম অবলম্বন করে পণ্য পাঠাতে হবে।
  4. ভালো পণ্য দেখিয়ে খারাপ পণ্য দেয়া যাবে না।
  5. নিজস্ব একটি দোকান বা স্টল থাকতে হবে।
  6. এবং ঠিকানা দিয়ে রাখতে হবে।
অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে অনেক ব্যক্তি নিজেকে তথা দেশের অর্থনীতিকে সাবলম্বি করেছে।

শেষ ব্যবসাটি হলো অফলাইন ব্যবসা। এই ব্যবসা অনেক সহজ এবং লাভ জনক। নিজের অর্থ বিনিয়োগ না করে একটি পণ্যের এফিলিয়েট করা। এই ব্যবসায় কোনো চাপ নেই। কমিশনের মাধ্যমে বেতন ধার্য করা হয়। এই ব্যবসাটি সকলেই করতে পারে না। এর কারণ একটি পণ্য সম্পর্কে পুরো পুরি ভাবে জেনে তারপর সেটি বিক্রি করে দিতে হয়।  এক্ষেত্রে অনেককেই বুঝাতে হয় এবং বুঝানো পর পণ্যটি তারা নিলে নিতে পা রে না নিলে নাই। তবে নিজস্ব পণ্য বিক্রির থেকে এই অফলাইনে অন্যের পণ্যের মার্কেটিং করে অনেক ইনকাম করা যায়। এই ব্যবসার অনেক সুুবিধাও রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
  1. এই ব্যবসা করার জন্য নিজস্ব অর্থ প্রয়োজন নেই। অন্যের পণ্য বিক্রি করেই আয় করা যায়।
  2. এই ব্যবসায় লাভ কিংবা ক্ষতির চিন্তা নাই।
  3. এই ব্যবসা একা কিংবা অনেকে মিলেই করা যায়।
  4. এই ব্যবসায় খুব বেশি সময় ব্যয় হয় না।
  5. এই ব্যবসাটি স্বল্প সময়ে লাভ জনক।
তবে এই ব্যবসা করতে নির্ধারিত কিছু নিয়ম নীতি মেনে চলতে হয়। নিয়ম গুলো নিচে দেয়া হলোঃ
  1. নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী চালানো যাবে না।
  2. প্রতিষ্ঠানের দেয়া নিয়ম ও গুণাগুণ মানুষকে বলতে হবে।
  3. প্রতারণার মতো জঘন্য অপরাধ করা যাবে না।
  4. লোক ঠকানোও যাবে না, খারাপ পণ্যকে ভালো বলা যাবে না। এককথায় লোক ঠকাতে মিথ্যা বলা যাবে না।
  5. সততা রাখতে হবে, আল্লাহর ভয় মনে রাখতে হবে।
ব্যবসা নিয়ে ইসলামিক মতবাদ: ইসলাম সুদ, ঘুস, জুয়া এবং এ সমস্ত অবৈধ পথ থেকে মানুষকে বাঁচাতে ব্যবসাকে বৈধ করেছেন।  কিন্তু মুখে বৈধ বললেই হবে না ব্যবসায়ের মূলনীতি সমূহ জানতে হবে। অবৈধ জিনিসের ব্যবসা  ইসলামে বৈধ নয়মিথ্যা বলে ভালো জিনিস বিক্রি করাও বৈধ নয়অর্থাৎ ব্যবসা হালাল করতে হলে একেবারে সহিহ এবং সততার সাথে ব্যবসা করতে হবে। 

ব্যবসা নিয়ে অনেক হাদিস রয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাদিসগুলো হলোঃ

    “একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে গিয়ে একজন খাদ্য বিক্রেতার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তিনি খাবারের ভিতরে হাত প্রবেশ করিয়ে দেখলেন ভিতরের খাবারগুলো ভিজা বা নিম্নমান। এ অবস্থা দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে খাবারের পণ্যের মালিক এটা কী? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল, এতে বৃষ্টি পড়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সেটাকে খাবারের উপরে রাখলে না কেন; যাতে লোকেরা দেখতে পেত? “যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয়” 
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০২)

    “চারটি গুণ যখন তোমার মধ্যে থাকবে, তখন দুনিয়াদারী সব খুঁয়ে গেলেও তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আমানত সংরক্ষণ, কথায় সততা, উত্তম চরিত্র, হালাল খাদ্য”। এ চারটি গুণ এমন, যেগুলো কোনো ব্যবসায়ীর মধ্যে বিদ্যমান থাকলে, অবশ্যই তার ব্যবসার উন্নতি হবে, আল্লাহ তা‘আলা তার ব্যবসা বাণিজ্যে বরকত দেবেন এবং এ ধরনের ব্যবসায়ী মানুষের নিকট প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য হবে। দুনিয়াতেও তার সম্মান বৃদ্ধি পাবে, আখেরাতে তো বটেই; কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য, আমরা আমাদের পণ্যগুলো বিক্রির জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকি। এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ, যা কখনোই কল্যাণ বয়ে আনে না। সাময়িক লাভবান হলেও পরিণতি খুবই করুণ।
{মুসনাদে আহমাদ (৬৬৫২) ও ত্বাবরানী, হাসান সনদে।}

    “ধ্বংস যারা পরিমাপে কম দেয় তাদের জন্য। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে। আর যখন তাদেরকে মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়”। 
(সূরা আল-মুতাফফিফীন, আয়াত: ১-৩)

    “হে আমার জাতি! ন্যায় নিষ্ঠার সাথে ঠিকভাবে পরিমাপ কর ও ওজন দাও এবং লোকদের জিনিসপত্রে কোনোরূপ ক্ষতি করো না”। 
(সূরা হূদ, আয়াত: ৮৫)

    “মেপে দেওয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং সঠিক পাল্লায় ওজন করবে। এটি উত্তম, এর পরিণাম শুভ”। 
(সূরা বনী ঈসরাইল, আয়াত: ৩৫)

    “কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তিন ব্যক্তির সাথে কোনো ধরনের কথা বলবেন না, তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। তাদের একজন- যে তার ব্যবসায়িক পণ্যকে মিথ্যা কসম খেয়ে বিক্রি করে”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৬)

    “যখন তুমি ক্রয়-বিক্রয় করবে, তখন তুমি বলে দিবে যে কোনো প্রতারণা বা ঠকানোর দায়িত্ব আমি নেব না। তোমার জন্য তিনদিন পর্যন্ত পণ্য ফেরত দেওয়ার অধিকার রয়েছে”।
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৬৪)

    “যারা সুদ খায় তারা কিয়ামতের দিন দণ্ডায়মান হবে শয়তানের আসরে মোহাবিষ্টদের মতো। কারণ, তারা বলে ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) ওতো সুদের মতো, অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন”। 
(সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৫)

চাকরি সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন👉 চাকরি

No comments

Theme images by MichaelJay. Powered by Blogger.